ইন্টারনেটে জ্ঞানের গণপরিসর
সারা বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারের একটা খুবই ছোট অংশ ধরা আছে বইতে, ছবিতে বা মৌখিক রূপে। আর ইন্টারনেটকে যতই মুক্ত আর গণতান্ত্রিক মনে হোক না কেন, তা আমাদের নিত্যব্যবহার্য জ্ঞানের জমির ঢালকে আরও একমুখী করে দেয়।
গুগলের হিসাবে ইং ২০১০ সালে সারা পৃথিবীতে ১.৩ কোটি বই আছে, ৪৮০টি ভাষায়। তার মধ্যে মাত্র ২০% গণপরিসরে বিনামূল্যে লভ্য আর মাত্র ১০-১৫%-এর ছাপাই চালু আছে। পৃথিবীর ৭০ কোটি মানুষ প্রায় ৭০০০ ভাষা আর বাচনে কথা বললেও, তার মাত্র ৭% ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের সেই ছাপা জ্ঞানভান্ডারের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ডিজিটাল জ্ঞানে পরিণতি পেয়েছে। আর সেই ডিজিটাল জ্ঞানের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ রয়েছে ইন্টারনেটে।
বিভিন্ন প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জ্ঞান ও কারিগরি দক্ষতাকে ইন্টারনেট জ্ঞানতন্ত্রের ভরকেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য, যা যা রসদ আর পদ্ধতি লাগে তার পরিচালনা আমরা করে চলেছি। উইকিপিডিয়ার অনলাইন জ্ঞানভান্ডার এর এক শুরুয়াতমাত্র। উইকিপিডিয়া অনলাইন জগতের অন্যতম জনপ্রিয় একটি জ্ঞানচর্চার ওয়েবসাইট, অতএব তাকে সমগ্র অনলাইন জ্ঞানভাণ্ডারের বকলম হিসাবে ধরা যেতেই পারে। কিন্তু উইকিপিডিয়া যে বিশ্বজ্ঞানভাণ্ডারের প্রতিনিধি নয়, তা আমরা জানি।
যদি আমরা উইকিপিডিয়াকে অনলাইন মুক্ত জ্ঞানভান্ডারের সূচক বা প্রতিনিধি হিসাবে দেখিও, তাহলে মনে রাখতে হবে যে পৃথিবীর ২০% (মুখ্যত উত্তর আমেরিকা আর ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ পুরুষ সম্পাদকরা) উইকিপিডিয়ার ৮০% সম্পাদনা করে্ন আর হিসেবমতে প্রতি দশজন উইকিপিডিয়া সম্পাদকের মধ্যে একজনমাত্র নারী হিসাবে স্বপরিচয় দেন। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউটের মার্ক গ্রাহাম ও তাঁর সহকর্মীদের গবেষণামতে উইকিপিডিয়া প্রবন্ধমালার ৮৪% ইউরোপ ও আমেরিকা সংক্রান্ত। আর ভূগোলকীয় দক্ষিণ নিয়ে বেশীর ভাগ প্রবন্ধ লেখা হয় ভূগোলকীয় উত্তরে বসে, অতএব কন্টেন্ট থাকলেও, তার দশা বেশ একপেশে।
উইকিপিডিয়ার জ্ঞানভান্ডারের নানা গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক শনাক্ত করতে ও নতুন, উন্নততর কন্টেন্ট দিয়ে সেই ফাঁক ভরাট করতে বিভিন্ন সম্প্রদায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। যেমন ভারতের দলিতরা, বসনিয়া আর হারজেগোভিনার কুঈয়ার নারীবাদীরা আর কুমেয়ায় গোত্রের দেশজ আমেরিকানরা নিজেদের নিজেদের জ্ঞানভান্ডার দিয়ে নানা শূন্যস্থান পূরণ করে চলেছেন। এই সব প্রচেষ্টার জন্য আমাদের সমর্থন ও উদ্যম পুরোমাত্রায় আছে। আমরা ক্রমাগত নতুন নতুন সুযোগ খুঁজতে থাকি যাতে আরও আরও সম্প্রদায়ের সাথে আমরা নিজেদের কর্মকান্ডকে জুড়তে পারি ও তাঁদের জন্য অনলাইন জমি গড়ে তুলতে পারি।
যে সব প্রশ্ন আমাদের খুব কাছের:
- জ্ঞান উৎপাদনে ভাগ নেওয়ার জন্য কাদের কাদের ডাক পড়ে?
- আমাদের জ্ঞানের উৎসকে কিভাবে আরও বিভিন্নতা দেওয়া যায়?
- ‘নিরপেক্ষতা’ কতদূর ভালো?
Translation: Sourav Roy