ইন্টারনেটের ভাষাপরিস্থিতি নিয়ে ২০২০-র আগামী রিসার্চ রিপোর্ট পড়তে চাইলে এই পাতায় নজর রাখুন!
ইন্টারনেটকে অনেকেই বিশ্বব্যাপী এক গণপরিসর বলে ভাবে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের ভাষা ইন্টারনেট এখনো বলতে, লিখতে, বা বুঝতে পারে না। সারা বিশ্বে কথিত ৭০০০-এরও বেশী ভাষার মধ্যে মোটামুটি ৫০০ খানেকের অনলাইন উপস্থিতি আছে, তার মধ্যে ইংরিজি আর চীনা ভাষার আধিপত্যই বেশী। ভাষাকে যদি জ্ঞানের বাহক ও প্রতিনিধি বলে ধরি, তাহলে মানবজগতের জ্ঞানের অধিকাংশের – বিশেষ করে বিভিন্ন প্রান্তিক কৌমের জ্ঞানের – এই গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অবকাঠামোর মধ্যে কোন স্থান নেই। এমত ভাষাপরিস্থিতি জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে এক বিরাট অবিচার, আর ডিজিটাল অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এক বড় লড়াই।
প্রান্তিক কৌমের মানুষরা যখন ইন্টারনেটে নিজেদের ভাষায় তাঁদের নিজেদের জ্ঞান লিপিবদ্ধ করতে পারেন না, তখন অফলাইন জগতের বিদ্যমান অসাম্য আরও জোরালো, আরও গভীর হয়ে ওঠে। আরও চিন্তার কথা এই যে, আমাদের মত প্রান্তিক মানুষেরা যাঁরা ডিজিটাল কন্টেন্ট আর অবকাঠামোর সংখ্যাগরিষ্ঠ উপভোক্তা তাঁরা এর উৎপাদক বা নিয়ন্ত্রক কোনটাই নন। এর পরিকাঠামো, ছক, গড়ন, বিষয়, রংঢং কোন কিছুর কোনও সিদ্ধান্তই আমাদের হাতে না। এই পরিস্থিতিকে বদলাতে হলে – ইন্টারনেটকে আবার ঢেলে সাজাতে গেলে, ডিজিটাল জ্ঞানকে নতুন ভাবে গড়তে গেলে – আমাদের বহুজনকে সদলবলে ক্রমাগত চেষ্টা করে যেতে হবে।
এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অনলাইন অসাম্য ও ভাষাপরিস্থিতির ফাঁকফোকর নিয়ে কারোর কাছে এখনো অব্দি সঠিক মানের যথেষ্ট তথ্য নেই। আবার এই নিয়ে যতটুকু উন্নতমানের গবেষণা আছে, যেমন ভাষাপরিস্থিতির ফাঁকফোকর সংক্রান্ত উইকিপিডিয়ার ও ইন্টারনেটের তথ্যভিত্তিক সেন্টার ফর ইন্টারনেট এন্ড সোসাইটির এবং অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউট-এর গবেষণা, তা নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে। আর ভবিষ্যতের সংগ্রামের কথা ভেবে আমাদের জানা জরুরী যে, প্রান্তিক ভাষা সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য আমাদের কাছে কি কি প্রায়োগিক কৌশল ও রসদ আছে (বিশেষতঃ যেগুলি বিনামূল্যের এবং মুক্তউৎস) আর কি কি আমাদের শূন্য থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে গড়ে তুলতে হবে।
এখন আমরা কি করছি?
ইন্টারনেটের ভাষাপরিস্থিতি নিয়ে আমরা আমাদের গবেষণা সহকারী সেন্টার ফর ইন্টারনেট এন্ড সোসাইটি (সি আই এস) এবং অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউট (ও আই আই) এর সাথে ‘স্টেট অফ ইন্টারনেটস ল্যাঙ্গুয়েজেস রিপোর্ট’ তৈরি করছি, যা ২০২০-র শেষ দিকে বেরোবে আশা করা যায়।এই প্রতিবেদনে ভাষাপরিস্থিতি নিয়ে সংখ্যাতাত্বিক ও বিবরণভিত্তিক নানা বুনিয়াদী গবেষণা থাকবে, যা নানা অবস্থান আর নানা প্রসঙ্গ থেকে এই বিষয়কে দেখবে।সচেতনতা বাড়ানো আর ভবিষ্যতের কর্মকান্ড স্থির করাই এই রিপোর্টের উদ্দেশ্য। সর্বতোভাবে বহুভাষিক ইন্টারনেট যে এখনো সুদূরপরাহত এক স্বপ্ন এবং তাকে সত্যি করতে আমাদের কিভাবে খাটাখাটনি করতে হবে, সে ব্যাপারে এই রিপোর্ট আমাদের দিশা দেখাবে, এই আমাদের বিশ্বাস।
এই বুনিয়াদী গবেষনা প্রকাশ করার পর আমরা সারা পৃথিবীর নানা কৌম আর সহকারীদের সাথে আমরা কাজ শুরু করবো। এই অসম ভাষাপরিস্থিতির নানা ফাঁকফোকর ভরাট করতে কোন কোন কাজ বেশী জরুরিভাবে আর বেশি দ্রুত করতে হবে, তাই হবে আমাদের অগ্রাধিকার।
এখনো অব্দি আমরা কি করেছি?
২০১৯-এর অগস্টে আমরা ‘ইন্টারনেটের ভাষার বিউপনিবেশীকরণ’ নিয়ে লেখা আর ভাবনা পেশ করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। তাতে ৩৮টি ভাষায় ৫০টি সাড়া পাওয়া গেছিল, যা থেকে ৯টি প্রস্তাব বাছাই হয়। বিভিন্ন বিষয়, অঞ্চল, অভিজ্ঞতা আর ভাষার প্রতিনিধিত্ব ভরা সেই ন’টি প্রস্তাব আরও কয়েকটির সাথে ‘স্টেট অফ ইন্টারনেটস ল্যাঙ্গুয়েজেস রিপোর্ট’ -এ প্রকাশিত হবে।
২০১৯-এর অক্টোবরে সারা পৃথিবী থেকে তিরিশ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে ‘ইন্টারনেটের ভাষার বিউপনিবেশীকরণ’ নিয়ে আমরা আলোচনাসভা বসিয়েছিলাম। নানামতধারী এই গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদরা একটি বিষয়ে একমত যে ভাষা হল জ্ঞানের ধারক ও বাহক, এবং ইংরিজি ছাড়া অন্য ভাষাদের ইন্টারনেটের সভায় আসন করে দেওয়া জরুরী। এই আলোচনাসভা থেকে আমরা যা যা শিখেছি তাও আমাদের আগামী ‘স্টেট অফ ইন্টারনেটস ল্যাঙ্গুয়েজেস রিপোর্ট’ -এ থাকবে।
ইন্টারনেটের ভাষার বিউপনিবেশীকরণ নিয়ে ২০২০-র রিপোর্ট পড়ুন
Translation: Sourav Roy